ওয়ার্নের ম্যানেজমেন্ট সংস্থা বিবৃতিতে জানায়, ‘শেনকে তাঁর ভিলায় পাওয়া যায় অচেতন অবস্থায়। মেডিক্যাল স্টাফদের সর্বোচ্চ চেষ্টাতেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। পরিবার এমন সময়ে গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছে। বিস্তারিত জানানো হবে পরে। ’ সর্বকালের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক রডনি মার্শের মৃত্যুর শোকের মাঝেই না ফেরার দেশে ওয়ার্ন। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, ক্রিকেটের জন্যই এ এক শোকের দিন। গত কিছুদিনে ওয়ার্নের শারীরিক কোনো অসুস্থতার কথা শোনেনি কেউ। সেই তাঁর এভাবে চলে যাওয়ায় শোকবিহ্বল পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। ওয়ার্নের এভাবে চলে যাওয়াটা এককথায় ফুটে উঠেছে ক্যারিবীয় কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডসের টুইটে, ‘অবিশ্বাস্য। স্তব্ধ হয়ে গেছি একেবারে। এটা সত্যি হতে পারে না...। ’
লেগ স্পিনকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আব্দুল কাদির। সোনালি চুলের শেন ওয়ার্ন বাড়িয়েছেন এর সৌন্দর্য। তরুণদের মাঝে করেছেন জনপ্রিয়। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গেছেন তরতরিয়ে। ১৯৯২ সালে অভিষেক টেস্টে ১৫০ রান খরচায় এক উইকেট নিয়েছিলেন যিনি, সেই তিনিই টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে পা রাখেন ৭০০ উইকেটের মাইলফলকে। অবসর নেন ২০০৭ সালে ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়ে। এ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরোতে হয়েছে বাধার পাহাড়। ১৯৯৮ সালে স্বীকার করেন ১৯৯৪-এ শ্রীলঙ্কা সফরে জুয়াড়িদের কাছে তথ্যপাচারের কথা। সমালোচনায় জর্জরিত হয়েও পরের বছর বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ ওয়ার্ন!
২০০০ সালে ডন ব্র্যাডম্যান, গ্যারি সোবার্স, জ্যাক হবস, ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে নির্বাচিত হন উইজডেন ম্যাগাজিনের ‘ক্রিকেটার অব দ্য সেঞ্চুরি’র সেরা পাঁচজনের একজন। একই বছর ইংল্যান্ডের এক নার্সের সঙ্গে ‘টেক্সট মেসেজ’ কেলেঙ্কারিতে হারান অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়কত্ব। ২০০৩ বিশ্বকাপ থেকে ফিরে আসতে হয় ডোপ কেলেঙ্কারিতে। ২০০৫ সালে বিচ্ছেদ হয় স্ত্রীর সঙ্গে। সেটা প্রভাব পড়েনি পারফরম্যান্সে। সে বছরই অ্যাশেজে নেন ৪০ উইকেট। বছরটা শেষ করেন ৯৬ উইকেট নিয়ে, এই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি আর কেউ।
তবে শুধু লেগ স্পিন, গুগলি আর ফ্লিপারের মায়ায় আটকে রাখা যাবে না শেন ওয়ার্নকে। সুনামের সঙ্গে বদনাম মিলিয়ে ক্রিকেটেরই বর্ণিল চরিত্র ছিলেন তিনি। নিষিদ্ধ হয়েছেন ডোপ টেস্ট নিয়ে। নারী কেলেঙ্কারিতে হারিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব। তার পরও অস্ট্রেলিয়ার মানুষ ভালোবেসে গেছে ওয়ার্নকে। কারণ ভক্তদের কাছে ‘ওয়ার্ন হচ্ছেন ফুটবলের ম্যারাডোনা’। ১৯৯৩ সালে ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’ করেছিলেন তিনিই। অ্যাশেজের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টে লেগের অনেক বাইরে পড়ে বাঁক নিয়ে বলটা উড়িয়ে দেয় মাইক গ্যাটিংয়ের স্টাম্প। গ্যাটিং প্রথমে ভেবেছিলেন স্টাম্পিং করেছেন উইকেটরক্ষক! পরে রিপ্লেতে বুঝতে পারেন অবিশ্বাস্য এক বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তখন থেকেই জাদু দেখানো শুরু শেন ওয়ার্নের। সম্মান পেয়েছেন উইজডেনের শতাব্দীসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হওয়ার।
অবসরের পরও সরব থেকেছেন সব সময়। কদিন আগেই বলেছিলেন কোচ হতে চান ইংল্যান্ডের। হতাশা জানিয়েছেন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। শরীরের মেদ ঝরিয়ে পুরো ফিটও হতে চেয়েছিলেন জুলাইয়ের মধ্যে। সেই ওয়ার্ন চলে গেলেন বড্ড অসময়ে। অবিশ্বাস্যভাবে। সত্যিই ওয়ার্নের মৃত্যু হয়েছে কি? কিংবদন্তির মৃত্যু নেই।


Most Popular
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
একটা কথা আজকাল শোনা যায়, ‘আমাদের গল্পে আমাদের স...
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষ

২০১৮ বিশ্বকাপে মেসি আর বর্তমান আর্জেন্টিনার মেসি এক নয়,
বিধ্বস্ত মেসিকে খুব কমই দেখ...