করোনা মহামারিতে দফায় দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। আর সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যায় বেড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলছে। চাল তেল পেঁয়াজও সবজির দাম মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষ। গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোজ্যতেলের দাম বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দ্রুত ভোজ্যতেলের দাম কমানোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর রায়সাহেব এলাকার বাসিন্দা জাকির বলেন, দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত অকল্পনীয়ভাবে বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও ইনকাম বাড়তেছে না। এদিকে চালের দাম কমছে না প্রতিকেজি নাজিরশাইল, মিনিকেট ও বাসমতি নামের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৫-৭০ টাকায়। এছাড়া মোটা মানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ এবং মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রায়সাবে বাজার থেকে ভোজ্যতেল কিনছিলেন নাসিরউদ্দিন সরদার লেনের বাসিন্দা খালেদা আক্তার বলেন, দফায় দফায় বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম গত দুই বছর আগে দুই লেটার তেল কিনতাম ২০০ টাকা দিয়ে এখন সেখাতে কিনতে হচ্ছে ৩৪০ টাকা। দুই বছর ব্যবধানে বেড়েছে ১৪০ টাকা। পাশাপাশি চিনি আটাসহ অধিকাংশ নিত্যপন্যেও দাম। তাই সরকারের নিত্যপন্যেও দিকে নজর দিতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়াতে পাওে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাচঁ ভাইঘাটলেন মুদি পণ্যের ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, পাইকারি বাজার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছেই। আর এ কারণে খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৩৩৫ টাকায় থেকে ৩৪০ টাকা, এক লিটারের তেল ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় উঠেছে। এর সঙ্গে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে সবধরনের সবজি। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, মাছ ও মুরগির দাম।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন বরবটি। এ সবজিটি কিনতে ক্রেতাদের কেজিপ্রতি ব্যয় করতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
কেজি একশ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে আরও দুটি সবজি। এর মধ্যে বাজারে নতুন আসা ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ভালো মানের করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে নি¤œমানের করলা কোথাও কোথাও ৬০ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে।
বরবটি ও ঢেঁড়শের এমন দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের কাশেম বলেন, বাজারে নতুন আসা ভালো মানের বরবটির দাম এখন একটু বেশি। এই বরবটি খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নি¤œমানের কিছু বরবটি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ঢেঁড়শ নতুন এসেছে। এখন যে ঢেঁড়শ পাওয়া যাচ্ছে তার মান খুব ভালো, ভালো জিনিস নিতে খরচ একটু বেশি করতে হবে এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে গত সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা বিক্রি করছেন। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কলতাবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা হয়েছিল। মাঝে পেঁয়াজের দাম কমে ৪৫ টাকায় নামে। কিন্তু দুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম আবার ৬০ টাকা হয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে আলু। গত সপ্তাহে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকা। এ তালিকায় আরও রয়েছে টমেটো। গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে এখন ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। শালগমের (ওলকপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দামে পরিবর্তন আসেনি।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দামে পরিবর্তন আসেনি। গরুর মাংস বাজার ভেদে ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমও গত সপ্তাহের মতো ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোলমাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা।
এককেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি।


Most Popular
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
একটা কথা আজকাল শোনা যায়, ‘আমাদের গল্পে আমাদের স...
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষ

২০১৮ বিশ্বকাপে মেসি আর বর্তমান আর্জেন্টিনার মেসি এক নয়,
বিধ্বস্ত মেসিকে খুব কমই দেখ...