ওয়াকিল আহমেদ
আমি তখন পুরান ঢাকার মহানগরী ৭৭’র থিয়েটার কর্মী। চোখে স্বপ্নÑ একদিন নাটকের বড় অভিনেতা হব। গিরীশ ঘোষ, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তকে ছাড়িয়ে যাবো এবং একদিন সিনেমা করব। গন্তব্যÑ একজন আধুনিক অভিনেতার শেষ ঠিকানা। সেই সময়ের আরেক থিয়েটার কর্মীÑরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাস্তি’ নাটকের ছিদেম রুই’র চরিত্রের দারুণ অভিনেতা অমল সুর ছিল আমার খুব নিকট বন্ধু।এ কই নাটকে চন্দরা দাসির চরিত্রে অভিনয় করতেন সেই সময়ের আরেক তুখোড় অভিনয় শিল্পী ডালিয়া রহমান। ‘শা¯ি’Í নাটকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়েছিল, বেশ দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। ডালিয়া রহমান অভিনীত বিটিভি‘র ‘বাঁচা’ নাটকটিও দর্শকহৃদয়ে খুব দাগ কেটেছিল। ‘শাস্তি’ নাটকটির নির্দেশনা করতেন বাবুল চৌধুরী। নাটকটি সেই সময় থিয়েটার অঙ্গনে বেশ জনপ্রিয় এবং সমাদৃত হয়েছিল।প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্রদ্ধেয় চাষী নজরুল ইসলাম মহিলা সমিতিতে ‘শাস্তি’ নাটকের মঞ্চায়ন দেখার পরেই ‘কাঠগড়া’ নামে নায়িকা রোজিনা ও নবাগত আবিদকে নিয়ে আলমগীর পিকচার্সের প্রযোজনায় সাদাকালোয় একটি সিনেমা শুরু করেছিলেন। আবিদও মহানগরী ৭৭’র শাস্তি নাটকের দুঃখিরাম রুই’র চরিত্রের নিয়মিত অভিনয় শিল্পী ছিলেন। তার আসল নাম আবুল হোসেন। সিনেমায় মানুষ তাকে আবুল চেয়ারম্যান নামেও জানেন।‘কাঠগড়া’ সিনেমাটির অনেকদিন শুটিং হওয়ার পরও অন্যতম একজন শিল্পীর প্রায় প্রতিদিনই শুটিংস্পটে দেরি করে উপস্থিত হওয়ার কারণে আলমগীর পিকচার্সের কর্ণধার মুভি-মোগল-খ্যাত জাহাঙ্গীর খান ক্ষুব্ধ হয়ে সিনেমাটির কাজ বন্ধ করে দেন। সে কারনেই সিনেমাটি আর মুক্তির মুখ দেখেনি। এই ঘটনার প্রায় একযুগ পর চাষী ভাই ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে রিয়াজ ও পূর্ণিমাকে নিয়ে ‘কাঠগড়া’ নাম বাদ দিয়ে ‘শাস্তি’ নামে সিনেমাটি রঙে নির্মাণ করেন। ছবিটি বেশ আলোচিত এবং সর্বমহলে সমাদৃত হয়।আমি থাকতাম তাঁতি বাজারের প্রসন্ন পোদ্দার লেনে, আর অমল থাকত শাঁখারী বাজারে। পাশাপাশি মহল্লায় থাকার কারণে আর পরিচয়ের পর থেকে একসাথে সবসময় চলার কারণে আমরা খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। নাটক করা, নাটক দেখা, নাটকের মহড়া দেয়া ছাড়াও আমি আর অমল একবার নিউ বঙ্গ দীপালি অপেরা নামে এক যাত্রাদলে শ্রী রতেœশ্বর বাবুর পরিচালনায় বেশ কিছুদিন বিভিন্ন যাত্রাপালায় প্রতি রাত্রি ৩০০ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নিয়মিত অভিনয় করেছি। তখন আরো একটা কাজ আমরা করতামÑআর তা হলো আমরা দুজন মিলে নাটকের প্রম্পটার হিসেবে দলের বাইরে বাণিজ্যিক নাটকগুলোতে নিয়মিত ভাড়ায় যেতাম। এতে করে পকেটে কিছু টাকর আসত এবং হাত খরচাটা ভালোই চলে যেত।সেই সময়ে আমাদের দলের মেকাপ আর্টিস্ট ছিলেন প্রয়াত দীপক কুমার সুর। তিনি তখন সিনেমাতেও বেশ জনপ্রিয় মেকাপ আর্টিস্ট ছিলেন। নায়করাজ রাজ্জাক ভাই দীপকদাকে খুব পছন্দ করতেন। রাজ্জাক ভাইর প্রায় ছবির মেকাপ আর্টিস্ট ছিলেন দীপকদা। দীপকদা তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেন। সিনেমায় কাজ করার জন্য এবং শুটিং দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি দীপকদাকে সময়ে-অসময়ে জ্বালাতন করতাম। এবং একসময় তার হাত ধরেই আমার সিনেমায় যাত্রা শুরু হয়।তো একদিন দীপকদার আমন্ত্রণে অভিনেতা অমল সুর আর আমি দুজন মিলে শুটিং দেখতে গেলাম টিকাটুলি¯‘ হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি বেঙ্গল স্টুডিওতে। শুটিং দেখার প্রত্যক্ষ সুযোগ পেয়ে আমরা খুব খুশি। সেখানে গিয়ে দেখিÑআজিজভাই ‘সমাধান’ সিনেমার শুটিং করছেন-শুটিংয়ের মানুষ এবং আনুষঙ্গিক সবকিছু দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি যেন ঝলমলে রূপালী আলোয় আলোকিত এক রূপকথার রাজ্যে ঢুকে পড়লাম...। সেকি আনন্দ, খুশিতে আত্মহারা হয়ে গলাম! সিনেমার সেই রূপকথার রাজ্যের রাজা ছিলেন চলচ্চিত্রকার শ্রদ্ধেয় আজিজুর রহমান, আমাদের প্রিয় আজিজভাই।দীপকদা আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আজিজভাইর সামনে নিয়ে গেলে আমি অবাক বিস্ময়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম তাঁকেÑযিনি সিনেমায় আমার দেখা প্রথম স্বপ্নপুরুষ! কিন্তু কে জানত তখন, কালক্রমে আমিও একদিন সিনেমার মানুষ হয়ে উঠব, এবং উঠলামও। দীপকদার মাধ্যমে হাফিজউদ্দিন ভাইর সঙ্গে ‘ঘরনী’ সিনেমার সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করলাম।শুরু হলো আমার কল্পিত সিনেমার রাজা আজিজুর রহমানের শুটিং স্পটে দেখা সিনেমার রাজ্যে বিচরণ, স্বপ্নের সিনেমায় আমার দীর্ঘ পথচলা। মাঝে মধ্যে আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলেই শ্রদ্ধা-সালাম জানাতাম। হতো একটু-আধটু কুশল বিনিময়। আজিজ ভাই সিনেমা নির্মাণে কতোটা সফল কিংবা তিনি কত বড় মাপের চিত্র নির্মাতা সেই বিচার-বিশ্লেষণ করবেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা, বিজ্ঞজনেরা। তবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নির্মাণ কৌশল আমার খুব ভালো লাগত, তাঁর গল্প বলার ঢং ছিল একদম সাদামাটা, সহজ-সরল। সাধারণ দর্শক সহজেই তাঁর সিনেমার অভিনয়ে-গানে হাসি-কান্নায় নিজেদের আবেগ অনুভূতিতে আপ্লুত হয়ে পড়তেন। ‘ছুটির ঘন্টা’ সিনেমার শো শেষে কাঁদতে কাঁদতে চাখের পানি মুছতে মুছতে হল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছি অনেককে। মনে হতো ‘একদিন ছুটি হবে’র গভীর ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকত তারা।আবার কখনো দেখেছি একজন রিক্সাওয়ালা ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার গান গাইতে গাইতে শহরময় ঘুরে বেড়াচ্ছেনÑ ‘ঢাকা শহর আইসা আমার পরাণ জুড়াইছে।’ সিনেমায় গানের উপযুক্ত ব্যবহার এবং গানের গুরুত্ব যে কতটা গভীর তা আজিজ ভাইয়ের সিনেমাগুলো দেখে শিখেছি। একটা ভালো গান যে একটা সিনেমাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা তাঁর কাছেই জানা। যেমন, ‘সমাধান’ সিনেমার একটা গান আমি আজো ভুলিনি-
‘তোমাদের সভায় আমার এ গান হয়তো বেমানান হবে-
নামহারা ফুল প্রাসাদ কাননে ঠাঁই পেয়েছে বলো কবে।’
পরিচালক আজিজ ভাই, সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহা আর গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার এই ত্রি-রতেœর অসংখ্য জনপ্রিয় গান আমাদের বাংলা সিনেমাকে যথেষ্ট ঋদ্ধ করেছে।
১৯৫৮ সালে স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশামের ‘এদেশ তোমার আমার’ ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে সিনেমায় কাজ শুরু করেন আজিজ ভাই। পরে এহতেশাম ভাইয়ের অনুজ চলচ্চিত্র পরিচালক মুস্তাফিজ ভাইর সঙ্গেও তিনি সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন এবং এই ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে তাঁদের জীবনের শেষ ছবি অবদি নিজের সিনেমা নিয়ে প্রচন্ডতম ব্যস্ত থাকা সত্তে¡ও তাঁদের ছবি নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন।
ময়মনসিংহের লোকগাঁথা নিয়ে আশরাফ সিদ্দিকীর গল্প অবলম্বনে আজিজ ভাই তাঁর প্রথম ছবিÑ‘সাইফুল মুলক বদিউজ্জামাল’ নির্মাণ করেন। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। এই ছবিটির পরে তিনি উর্দু ভাষায়ও নির্মাণ করেন। আজিজ ভাই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান মিলিয়ে প্রায় ৫৪টি ছবি পরিচালনা করেন। প্রায় সবগুলো ছবি বাণিজ্যসফল এবং দর্শকপ্রিয়।
আমরা আজিজ ভাইর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্বাদের, রসের সুন্দর-সুন্দর ছবি উপহার পেয়েছি ‘মেরে আরমান মেরে সাপনে’, ‘সাত সেহেলী’, ‘পারদেমে রাহেনে দো’ নামে তিনটি উর্দু ভাষায় ছবি নির্মাণ করেন। বাংলা ভাষায় তার নির্মিত ছবি যেমন ‘রঙিন রূপবান’, ‘কুঁচ বরণ কন্যা’, ‘মধুমালা’, ‘অতিথি’, ‘শাপমুক্তি’, ‘সমাধান’, ‘অনুভব’, ‘অশিক্ষিত’, ‘স্বীকৃতি’, ‘পরিচয়’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘গড়মিল’, ‘ঘর ভাঙ্গা ঘর’, ‘মেহমান’, ‘অভিমান’, ‘জয় বিজয়’, ‘ছুটির ঘন্টা’, ‘অমর প্রেম’, ‘অহংকার’, ‘অগ্নিকন্যা’, ‘তালবেতাল’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘শীশমহল’, ‘বাপবেটা ৪২০’, ‘জিদ’, ‘দিল’, ‘ভাইভাবী’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’, ‘কথা দাও’, ‘লজ্জা’, ‘মায়ের আঁচল’, ‘আলিবাবা ৪০ চোর’, ‘জমিদার বাড়ীর মেয়ে’, ‘জোহরা’ এবং ‘মাটির ঘর’ সহ আরো আরো অনেক সিনেমার নির্মাতা তিনি।
আজিজ ভাই প্রযোজক হিসেবেও অনেক ছবি নির্মাণ করেছেনÑযার মধ্যে একটি হচ্ছে মতিন রহমানের পরিচালনায় নির্মিত ‘লাল কাজল’। ছবিটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলো।
দুঃখজনক হলেও সত্য জীবদ্দশায় আজিজভাই কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার কিংবা পদক পাননি। কেন পাননি সেই প্রশ্নটি আমার কাছে আজও দুর্বোধ্য। তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি, এমনকি আমাদের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কোনোরকম শোকবাণী পাইনি, যদিও পাওয়া উচিত ছিল। তবে আশার কথা যে, আজিজ ভাইয়ের নির্মিত ছবির দর্শকপ্রিয়তা ছিল খুব। এবং দর্শকদের ভালোবাসাই হচ্ছে একজন সিনে পরিচালকের বড়া পাওয়, বড় পুরস্কার।
এই জটিল জীবনে নানান সমস্যায় জড়িত মানুষেরা যখন আজিজ ভাইয়ের সিনেমা দেখে একটু কেঁদেছেন, হেসেছেন; রূপালী পর্দায় আঁকা চলমান ছবির মায়ায় বিনোদিত হয়েছেন, লাখো মানুষের হাতের তালি আর বাহবায়, ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেনÑসেটাই হচ্ছে বড় পুরস্কারÑ যা আজিজ ভাই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে বঁচে থাকবেন বহুকাল...।
আমি রভবে অবাক হইÑযা আমাকে চুম্বকের মতো আজিজ ভাইয়ের ব্যক্তিত্বের দিকে টানেÑ তা হলো, তিনি কেমন করে সারাজীবন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির লোকজন-শিল্পী-কুশীলবের কাছে সমানভাবে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন এবং কী করে নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে সর্বমহলে নিজেকে ধরে রাখতে পেরেছিলেন। কারো সঙ্গেই তাঁর বিরোধ ছিল না, ছিল না কোনো সংঘাত। তিনি যেন আমাদের সবার কাছে সব অভিযোগের উর্ধ্বে ছিলেন। তিনি সবসময়ই সকলের প্রাণের মানুষ হয়ে টিকে ছিলেন, এখনও আছেন।
গত ১৪ মার্চ ২০২২ তারিখে আজিজ ভাই এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাপ্রস্থানের পথে পা বাড়ালেন, চলে গেলেন অন্যলোকে। তখন মনে-মনে আমার দেখা আজিজ ভাইকে চোখের পর্দায় ভাসালাম। পরিচয়ের পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একটিবারের জন্যেও এমন কোনো দৃশ্য ভেসে উঠল না যেখানে দেখলামÑআজিজভাই কারো সঙ্গ কোনো রকমের বাজে ব্যবহার কিংবা খারাপ আচরণ করছেন। বুকে হাত রেখে বলছি-তাঁর মন্দ কিছুই খুঁজে পাইনি। শিবলী ভাইর সঙ্গে খুব সখ্য ছিলো আজিজ ভাইয়ের। দুজনের গ্রামের বাড়ি যমুনার ওপারেÑশান্তাহার আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
শিবলী ভাইয়ের সঙ্গে আমি কাজ করার সুবাদে আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা আগের চেয়ে বেড়ে যায়। তারা দুজন যখন একে অপরের সঙ্গে কথা বলতেন তখন আমি দারুণভাবে উপভোগ করতাম। কান খাড়া করে রাখতাম নতুন কিছু শেখার জন্য, জানার জন্য। তাঁরাইতো আমাদের গুরু ছিলেন, শিক্ষক ছিলেন, ছিলেন আমাদের স্কুল।
আমি কোনোদিনই সহকারী হিসাবে আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করিনি। কিন্তু তারপরও আজিজ ভাই ছিলেন আমার কাছে সিনেমার একজন প্রিয় শিক্ষক। আজিজ ভাই কোথাও শুটিং করছেন জানলেই সেটে চলে যেতাম। কখনো-কখনো একা, আবার কখনো-কখনো শিবলী ভাইয়ের সঙ্গে। আজিজ ভাইয়ের সহকারী এবং শ্যালক টিপু ছিল আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওর কারণেও প্রায়ই আজিজ ভাইয়ের সান্নিধ্যে আমার যাওয়া হতো। টিপুও অনেক আগেই এই দুনিয়া ছেড়ে অকালে চলে গেছে! সিনেমার সেটে-শুটিংয়ে কিংবা পরিচালক সমিতিতে শিবলীভাইর সঙ্গে কিংবা সে ছাড়াও আজিজ ভাই যেখানেই সিনেমা নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা আলাপ করতেন বা কিছু বলতেন, সামনে উপস্থিত থাকলেই আমি গোগ্রাসে প্রিয় শিক্ষকের লেকচার হিসাবে গিলতাম। আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি তা তো তাদেরই কল্যাণে।
‘সৎ মানুষ‘ সিনেমার নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৯৯২‘এ আমি পরিচালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলাম। তখনো আজিজ ভাই একজন নিরহংকারী মানুষের মতন সিনেমা নিয়ে আমার ভাবনা এবং পরিকল্পনার খোঁজ-খবর নিতেন, উপদেশ দিতেন এটা কর-ওটা কর বলে। সিনেমার অতি কঠিন বিষয়গুলোর সহজ সমাধান আজিজ ভাইয়ের কাছেই পেতাম। দিনেদিনে তিনি এমনই সিনেমার বিশাল এক অভিধানে পরিণত হয়েছিলেন।
যদি কেউ আমাকে প্রশ্ন করে- আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষটির নাম কী? আমার উত্তর হবেÑ আজিজুর রহমান! এ-জগতে তিনি ছাড়া কোনো পরিশুদ্ধ মানুষ নেই এমন বলা হয়তো ঠিক হবে না, কিন্তু আমার মতে তার শুদ্ধতা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, থাকা বোধহয় উচিতও নয়।
প্রিয় আজিজ ভাই, এখন থেকে আর কোনোদিন অলক্ষ্যে পিঠের ওপর হঠাৎ আপনার স্নেহময় ছোঁয়ায় আর চমকে উঠব না! আপনি আর জানতে চাইবেন নাÑ কিরে কেমন আছিস, কি করছিস, ভালোতো? না, আপনার অকাল প্রয়াণে আমি বা আমরা ভালো নেই! আপনাকে হারিয়ে ফেলার একটা নিগুঢ় কষ্ট থেকেই বলছি, আমরা ভালো নেই, আগের মতো আর ভালো নেই আমদের সিনেমাও...।
শেষ কথা, প্রিয় আজিজ ভাই, আপনি ভালো থাকবেন। আমাদের সিনেমার জগতে আজীবন আপনি যেমন একজন নিপাট, ভালো, সাদা মনের মানুষ ছিলেন, তেমনই ভালো থাকবেন ওপারেও! ভালো থাকবেন সেখানেও- মহান আল্লাহর সাত আসমানের যেখানে আপনি এখন আছেন...।
লেখক : বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক


Most Popular
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
একটা কথা আজকাল শোনা যায়, ‘আমাদের গল্পে আমাদের স...
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষ

২০১৮ বিশ্বকাপে মেসি আর বর্তমান আর্জেন্টিনার মেসি এক নয়,
বিধ্বস্ত মেসিকে খুব কমই দেখ...