এ সময়ে ঢালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ববি। পুরো নাম ইয়ামিন হক ববি। করোনার দুই বছর শুটিং থেকে দূরে ছিলেন। দুই বছর পর কাজে ফিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম ও বিজ্ঞাপনচিত্রে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ নায়িকা। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন ববি। আন্তরিক আড্ডায় ওঠে এসেছে তার ভাবনা, পরবর্তী
কাজের ফিরিস্তি
ইয়ামিন হক ববি। ঢালিউডে তার পথচলা প্রায় এক যুগ। ২০১০ সালে ইফতেখার চৌধুরীর ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক ঘটে তার। এরপর উপহার দিয়েছেন বেশ কয়েকটি আলোচিত ও ব্যবসাসফল ছবি। সেই তালিকায় আছে ‘দেহরক্ষী’, ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’, ‘হিরো : দ্য সুপারস্টার’, ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’, ‘রাজাবাবু’, ‘বিজলি’, ‘নোলক’, ‘বেপরোয়া’ ইত্যাদি। ক্রমশ নিজের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। এখন তার ওপর ভরসা রাখতে পারেন প্রযোজক ও পরিচালক। তাকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হচ্ছে ছবি। নিজের যোগ্যতায় ববি পরিণত হয়েছেন ঢালিউডের শীর্ষস্থানীয় এক নায়িকায়। ববির হাতে আছে একাধিক ছবি। সেসব ছবিতে তার চরিত্রের মাঝে রয়েছে ভিন্নতা। শুরুতেই জানতে চাওয়া ববির নতুন ছবিগুলো প্রসঙ্গে। ববি শুরু করলেন তার নতুন ছবি ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘স¤প্রতি একটি নতুন ছবির সাথে যুক্ত হয়েছি। ছবির নাম ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’। এ ছবির গল্পটা চমৎকার। ভিন্ন কিছু চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে থেকেই ছবিটি করছি। আশা করছি, সব ঠিকঠাক থাকলে ভালো কিছু পাবে দর্শক।’
ববি বলে চললেন, ‘আবার রাশিদ পলাশের ‘ময়ূরাক্ষী’-তে আমি একজন চিত্রনায়িকার ভ‚মিকায় অভিনয় করেছি। এ ছবির দুটো গানের শুটিং এখনো বাকি। এ চরিত্রটি করে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি নিজেই একজন চিত্রনায়িকা। তবুও চিত্রনায়িকার চরিত্র ফুটিয়ে তোলা চ্যালেঞ্জিং ছিল। একজন নায়িকার জীবনে উত্থান-পতন আছে। তাদের কখনো কখনো পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একটা বিষয় না বললেই নয়, আমি ধূমপান পছন্দ করি না। কিন্তু এ ছবিতে আমাকে ধূমপান করতে হয়েছে। প্রথমে সমস্যা হলেও পরবর্তী সময়ে মানিয়ে নিয়েছি। দর্শকরা দেখে বলতে পারবে সবকিছু মিলিয়ে কেমন করেছি।’
‘ময়ূরাক্ষী’ ছবিটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ববি রূপদান করছেন চিত্রনায়িকা ‘সিমলা’র চরিত্রে। এমন গুঞ্জন প্রসঙ্গে ববি বলেন, ‘সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। মূল ঘটনা না দেখিয়ে কিছুটা তো রদবদল করা হচ্ছেই।
অন্যদিকে শামীম আহমেদ রনির ‘এবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে একজন ধর্ষিতার চরিত্রে অভিনয় করেছি। এটিও একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। আবার সৈকত নাসিরের ‘পাপ’ ছবিতে আমি একজন ডিবি অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার চরিত্রটিই শুধুমাত্র প্রোটাগনিস্ট। তাছাড়া সৈকত নাসির আমার পছন্দের একজন নির্মাতা। তার কাজ ভালো হয়। এটিও ভালো হবে বলে আশা করছি। ‘পাপ’র শুটিং শেষ হয়েছে। ডাবিং বাকি আছে শুধু।’
ববির আগামী ছবিগুলোয় তাকে পাওয়া যাবে ভিন্নধর্মী সব চরিত্রে। এমনসব চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে এ নায়িকা জানান, আমি কষ্ট করে ভিন্নধর্মী চরিত্র বেছে নিয়েছি। বেছে বেছে কাজ করছি। দর্শকরা যে সাপোর্ট ও ভালোবাসা দিয়েছেন, তার প্রতিদান দিতেই এ প্রচেষ্টা। কারণ, তাদের জন্যই আমি আজকের ববি।
দেখতে দেখতে ক্যারিয়ারে প্রায় এক যুগ পার করছেন ববি। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে নিজেকে মূল্যায়ন করতে বললে ববি জানান, অনেককিছু শিখেছি। বুঝতে পেরেছি। অনেক সময় ঠকেছি; আবার জিতেছিও। চড়াই উৎরাই পেরিয়েই আজকের অবস্থানে এসেছি। তারা আমাকে এক নামে ‘ববি’ হিসেবে চিনে। দর্শকের কাছে আমার গুরুত্ব বেড়েছে। তারা আমাকে সম্মান দিয়েছে। ভালোবাসা দিয়েছে। তাদের এ সম্মান ও ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য এমন কাজ করে যেতে চাই যেন আমি বেঁচে না থাকলেও তারা আমাকে মনে রাখে।
খানিক ভেবে ববি যোগ করেন, ‘পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন থাকেন। তাদের সাথে মান-অভিমান হয়। এরকম পরিবার গড়ে ওঠেছে এ অঙ্গনেও। তাদের সাথেও এমনটি হয়। দিনশেষে সম্পর্কেরই জয় হয়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমার আরেকটি পরিবার। এ ইন্ডাস্ট্রির মানুষজন আমার পরিবারের সদস্য।
কথার রেশ ধরে ববি জানান, তার কাছে ছোটপর্দায় কাজের প্রস্তাব এসেছিল। তিনি সেসব প্রস্তাবে বিনয়ের সাথে ‘না’ বলেছেন। ববি বলেন, ‘কোভিডের সময় বিভিন্ন সিরিজ ও নাটকের প্রস্তাব এসেছে। আমি অপেক্ষা করেছি। দর্শক টাকা খরচ করে আমাকে দেখে অভ্যস্থ। সেই আমি নাটকে কাজ করলে, চ্যানেল ঘুরিয়ে দর্শক দেখতে পারবে। এত সহজলভ্য হওয়া ঠিক নয়। ফেসবুকেও অনেকে জানতে চেয়েছে, কবে আবার পর্দায় দেখবে। আমি বিরক্ত হইনি। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছি। তখন ধৈর্য ধরেছি বলেই, এখন হাতে এতগুলো ছবি।
ববি অবশ্য মাঝে ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্মে কাজ করেছেন। চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় ইমদাদুল হক মিলনের গল্পে নির্মিত ‘সুরভী’ ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিনি। বঙ্গ প্ল্যাটফর্মে ‘বেজড অন বুক’ সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিতে প্রচারিত এ কাজটি করার পেছনে যথেষ্ঠ ুকারণ আছে। ববি বলেন, ‘এটি একটি বিশেষ কাজ। চয়নিকা চৌধুরী ভালো নির্মাতা। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাসের নামে আমার চরিত্রের নাম। আমার সহশিল্পী ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা, ডলি জহুর ও শম্পা রেজা। তাদের সাথে কাজ করা বড় পাওয়া। তাছাড়া এ টেলিফিল্মে কোনো পুরুষ শিল্পী ছিলেন না। সবকিছু মিলিয়ে এ কাজটি করে ভালো লেগেছিল।’
ওটিটির জন্য একটি কাজ করলেও ববির কাছে সিনেমার আবেদন অসীম। তা যেন ফুরাবে না কখনো। তার ভাষ্যে, ফিল্মের আবেদন আজীবন থাকবে। ওটিটি বা ওয়েব প্ল্যাটফর্ম সেই জায়গা নিতে পারবে না। বড় সিনেমা হলে গিয়েই দেখবে দর্শক।
শাকিব খানের সাথে ববির জুটি দর্শক সাদরে গ্রহণ করেছে। এ জুটির সবকটি ছবি সফল। সে প্রসঙ্গ তুলতেই এক গাল হেসে ববি বলেন, ‘শাকিবের সাথে আমি ছয়টি ছবি করেছি। প্রতিটি ছবি ভালো চলেছে। হিট হয়েছে। দর্শক আমাকে তার সাথে দেখতে চায়। আগামীতে ভালো প্রজেক্ট এলে এ জুটিকে ফের পর্দায় দেখবে দর্শক। একটি কথা বলতে চাই, শাকিব খান দেশে ফেরার পর ভক্ত-দর্শকের উন্মাদনা ভীষণ ভালো লেগেছে। তার জন্য ভক্তদের এমন উচ্ছ¡াস দেখে মনে হয়েছে যোগ্য মানুষটিকেই সম্মান জানাচ্ছে তারা।’
কথায় কথায় তোলা হলো এ সময়ে আলোচনায় থাকা সিনেমার কথা। দর্শক সিনেমা হলে ফিরেছে। এমন দৃশ্য দেখে ববি বেশ আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘সিনেমার এ জোয়ার খুব ভালো লাগছে। দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখছে। সে কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাচ্ছে। বিষয়টা সিনেমার জন্য ইতিবাচক। আমি ‘পরাণ’র জন্য মিমকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি। আর ‘হাওয়া’-তে চঞ্চল চৌধুরী ভালো করেছেন। তিনিও আমার পছন্দের একজন অভিনেতা। সিনেমার এ সুসময় সবার জন্য স্বস্তিদায়ক।’
১৮ আগস্ট ছিল ববির জন্মদিন। এ দিনটি নিয়ে নায়িকার আগ্রহ না থাকলেও তার শুভাকাক্সক্ষীদের ভীষণ উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছার জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন তারা। ববিও জন্মদিন উদযাপন করেছেন কাছের মানুষদের নিয়ে। তিনি বলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। তবে কাছের মানুষজন সারপ্রাইজ দিতে পছন্দ করে। এবারও দিয়েছে। আম্মা দেশে আছেন। তাদের নিয়েই জন্মদিনের সময়টা কেটেছে।’
ববি একজন প্রযোজকও। কয়েকটি ছবি প্রযোজনা করেছেন। এ অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা ফিল্ম ভালোবাসে তারা ফিল্মের সাথে জড়িত থাকতে ভালোবাসে। প্রতিটি সেক্টরে কাজ করতে চায়। আমিও চেয়েছি। ভবিষ্যতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আবার প্রযোজনায় ফিরতে পারি।’
এদিকে একটি গুঞ্জন ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ববি প্রেম করছেন প্রযোজক-পরিচালক সাকিব সনেটের সাথে। হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বলেননি তারা। তবে এবার জন্মদিনে প্রেমের বিষয়টি খোলাসা করলেন সাকিব সনেট। ববিকে নিয়ে তার আবেগঘন পোস্ট নিশ্চিত করল তারা প্রেম করছেন। পরবর্তী সময়ে ববিও স্বীকার করে নিলেন, তারা পরস্পর প্রেমিক-প্রেমিকা।
প্রেমের বিষয়ে ববি বলেন, ‘সাকিব সনেটের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক দিনের। ‘নোলক’ সিনেমায় অভিনয় করার সময় তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ছবিটি করতে গিয়ে সে সমস্যায় পড়ে। এরপর আমরা পরিশ্রম করেছি ছবি মুক্তি পর্যন্ত। এরপর দু’জনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করি। তখন আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকেই পরস্পরকে ভালো লেগে যায়। কাছাকাছি আসি। ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ফলে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
এক্ষুণি বিয়ে করছেন না ববি। সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন বিয়ের ব্যাপারটা। যদিও গুঞ্জন আছে তারা বিয়ে করেছেন। ববির মতে, তারা সুন্দর একটি সম্পর্কের মাঝে আছেন। বিয়ে করলে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় ছবি প্রকাশ করেন ববি। তার ছবি দেখে নেটিজেনরা ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে ববি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই আছে। এ সময়ে দর্শকদের সাথে যোগাযোগের চমৎকার মাধ্যম ফেসবুক। তবে মাত্রা ছড়িয়ে গেলে নিজের গুরুত্ব কমে যায়। তাই জেনে বুঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা উচিত।
মোহাম্মদ তারেক


Most Popular
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
একটা কথা আজকাল শোনা যায়, ‘আমাদের গল্পে আমাদের স...
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষ

২০১৮ বিশ্বকাপে মেসি আর বর্তমান আর্জেন্টিনার মেসি এক নয়,
বিধ্বস্ত মেসিকে খুব কমই দেখ...