বড় হয়েছেন দেশের বাইরে। পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে। বাংলা চিত্রনাট্যকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে অভিনয় করতেন একটা সময়। তাই বলে তিনি বসে থাকেননি। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠেছেন। আর এখন তিনি ছোটপর্দার সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন অভিনেত্রী। বলছি মেহজাবীন চৌধুরীর কথা। প্রায় এক যুগ আগে তিনি হয়েছিলেন ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’। এ সময়ে নিজেকে ভেঙে গড়ে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মেহজাবীন। বহুমাত্রিক চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। টেলিভিশন নাটকের প্রায় সকল জনরায় অভিনয় করেছেন তিনি। এজন্যই তার এত চাহিদা। পরিচালকদের আস্থার নাম মেহজাবীন।
আজকের এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না মেহজাবীনের জন্য। নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করার জন্য তিনি পাশে পেয়েছেন সহশিল্পী, পরিচালক ও অন্যান্যদের। তিনি বলেন, ‘ভাবলে অবাক হই, মনে হয় এই তো মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। আমার আজকের অবস্থানের পেছনে আমার বাবা- মায়ের সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা আমাকে বিভিন্ন সময়ে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। আমার মা আমার পাশে থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, এগিয়ে যাওয়ার পথে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’
তিনি যোগ করেন, ‘মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও অভিনয়েও নিয়মিত থাকব, এটা আগে ভাবিনি। ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমি স্টিলেই ফোকাস দিয়েছি বেশি। আমার কাছে মনে হতো অভিনয় থেকে মডেলিংটা সহজ; তাই এখানেই থাকি। কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে অভিনয়েই বেশি মনোযোগ দেই। তখনো যখন অভিনয় করতাম, কত কথা শুনতাম মানুষের কাছে! অনেকেই বলত, মডেলরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে পারে না।’
বাংলা বলতে কষ্ট হতো মেহজাবীনের। তিনি অকপটে স্বীকার করেন সে কথা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার যেহেতু বাংলা বলতে অনেক কষ্ট হতো সেটা কাটিয়ে ওঠতেও সময় লেগেছে। যখন আমার স্পিচ স্পষ্ট হয়ে যায়, ফ্লুয়েন্টলি বাংলা বলতে শিখে যাই তখন অভিনয়ের দিকেই ফোকাস বেশি দিয়েছি। তখন নিজের মধ্যে কনফিডেন্ট বেড়ে গেল অনেকটা। সে সময় নিজেকে সেই জায়গাটার জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করি এই ভেবে যে আমি অভিনয়েই থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটা প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, মডেলরাও আসলে অভিনয় করতে পারে; যদি তাদের মধ্যে অভিনয় সত্ত¡টা থাকে। সবারই একটা ধারণা থাকে যে, মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলে শতভাগ অভিনেতা বা অভিনেত্রী হওয়া সম্ভব নয়। আমি সেটাই ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছি এবং পেরেছিও। তবে এখনো যে আমার উচ্চারণে সমস্যা হয় না, তা নয়; তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি সময়ের সাথে সাথে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে, মূল্যায়ন আছে। হয়তো সব কাজ সবার ভালো লাগে না, আবার কিছু কাজ ভালো লাগে। কিন্তু সবসময় ভালো কিছু করার চেষ্টার মধ্যেই থাকি।’
গত ঈদে অন্যবারের চেয়ে কমসংখ্যক নাটকে দেখা গেছে মেহজাবীনকে। তবে, যে ক’টি নাটকে অভিনয় করেছেন প্রায় প্রত্যেকটিতে পেয়েছেন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘এটাই তো আনন্দের। ‘ভয়েস ক্লিপ’, ‘অ্যাম্বুলেন্স গার্ল’, ‘ব্যবধান’, ‘হারানো সংবাদ’ থেকে অসংখ্য সাড়া পেয়েছি। অনুভব করেছি, কাজ ভালো হলে সেটা দর্শক পছন্দ করবেই।’
২০১৭ সালে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘বড় ছেলে’ নাটকে মেহজাবীন অভাবনীয় সাড়া ফেলেছিলেন। ভিকি জাহেদের ‘পুনর্জন্ম ‘ সিরিজে দেখা গেছে আরেক মেহজাবীনকে। চরিত্রের বিভিন্ন শেডে ধরা দিয়েছেন তিনি পর্দায়। তবে তাকে নিয়ে অভিযোগ, কান্না করতেই শুধু দেখা যায় নাটকে। এ নিয়ে মেহজাবীন বলেন, ‘আমি সবসময় একটা গল্প যখন হাতে নেই, সেটা যেমনই হোক না কেন; সেই গল্পটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। আমি কখনোই ভাবি না কাঁদব নাকি হাসব! অন্য নাটকে কাঁদছি, এখানে কাঁদব না! আমি শুধু গল্পে আর চরিত্রে নিজেকে ধারণ করে গিয়েছি। গল্পে যেটা চেয়েছে আমি শুধু সেটা পারফর্ম করেছি বা করি। গল্পের প্রয়োজনে যখন যা করা দরকার, সেটা করতেই হবে। তা নাহলে তো কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, কেউ যদি বলে মেহজাবীন ওই নাটকে আই লাভিউ বলেছে, এই নাটকেও আই লাভিউ বলেছে; এটা তো মিলে গেছে! এটা তো হতে পারে না আসলে। সো, আমি এগুলা কখনোই মাথায় নেই না। গল্পের প্রয়োজনে হাসি, কান্নাÑ যা করা প্রয়োজন আমি সেটাই করার চেষ্টা করি।’
‘রেডরাম’ খ্যাত এ তারকা বলেন, ‘দর্শক সমালোচনা যখন করে সেই ফিডব্যাকটা আমি অবশ্যই নেই। কিন্তু আমার তো আমার স্ক্রিপ্টটাকে শতভাগ পূর্ণতা দিতে হবে। কেউ আমার কাছ থেকে কমেডি কাজ চায়, আবার কেউ সিরিয়াস কাজ চায়! তাদের মধ্যে থেকেই আলাদা হয়ে এরকম মন্তব্যগুলো করে থাকে। কিন্তু আমার তো কয়েকজনকে নিয়ে ভাবলে হবে না। আমার সবাইকে নিয়েই ভাবতে হয়। মোটকথা, আমি স্ক্রিপ্টের ওপর পারফর্ম করি। স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনেই অতিরঞ্জিত কিছু করি, ওভার অ্যাক্টিং করলেও সেটা গল্পের প্রয়োজনেই। সুতরাং আমি গল্পের কাজটাই করি, সেটা যেমনই হোক।’
নিজের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বছর শেষে বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়ে থাকেন মেহজাবীন। এ অর্জন প্রসঙ্গে বলেন, ‘একেকটি পুরস্কার দর্শকের ভালোবাসা প্রকাশ করে। তারা আমার কাজ পছন্দ করেন বলেই এত সম্মান পাচ্ছি। পুরস্কারগুলো ভালো কাজ করার শক্তি জোগায়। নতুন উদ্যমে কাজের অনুপ্রেরণা পাই।’ মেহজাবীনকে বড়পর্দায় দেখার ইচ্ছে দর্শকের দীর্ঘদিনের। অভিনেত্রী নিজেও জানেন সে কথা। তবে এ প্রশ্নে তার সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘যদি ভালো চিত্রনাট্য ও চরিত্র পেয়ে যাই তাহলে দেখা যেতেও পারে।’
জাবেদ জাহাঙ্গীর


Most Popular
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
একটা কথা আজকাল শোনা যায়, ‘আমাদের গল্পে আমাদের স...
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষ

২০১৮ বিশ্বকাপে মেসি আর বর্তমান আর্জেন্টিনার মেসি এক নয়,
বিধ্বস্ত মেসিকে খুব কমই দেখ...