১৯৬৩ সাল। অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সজাগ পূর্ব বাংলা। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন সংগ্রাম, চলছে তপ্ত রাজপথে মুক্তির মিছিল। এমনই তেজদীপ্ত সংগ্রামী চেতনার আলো ছুঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালির স্বপ্নসারথী, নীতি নৈতিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, রাজপথের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, গণমানুষের নেতা ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
৫ জুন, ১৯৬৩ সাল। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আইনজীবী দম্পতি অ্যাডভোকেট নুরুচ্ছফা তালুকদার ও অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হাছান মাহমুদ। বাবা নুরুচ্ছফা ছিলেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ছোটবেলা থেকে বই পড়তে ভালোবাসতেন হাছান মাহমুদ। রাজনীতিবিদ বাবার এনে দেওয়া সূর্য সেনের বিপ্লবী বই পড়ে নিজেকে সেভাবে গড়তে শুরু করেন এই মেধাবী রাজনীতিবিদ। তারই ধারাবাহিকতায় স্কুলপড়ুয়া দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র হাছানের চট্টগ্রাম জামাল খান ওয়ার্ড ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্যদিয়ে সূচনা হয় রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাস প্রকাশের। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হয় আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধে বিশ^াসী একটি নাম মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ।
ছাত্রজীবনে ড. হাছান মাহমুদ ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে অধ্যয়নকালে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতক, ১৯৮৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন করেন এই মেধাবী রাজনীতিবিদ। ১৯৯৬ সালে বেলজিয়ামের ব্রিজ ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান ও একই বছর ইউনিভার্সিটি অব লিবহা ব্রাসেলস থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে মাস্টার্স করেন। পরবর্তী সময়ে দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে ২০০১ সালে লিম্বুর্গ ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাম থেকে পিএইচডি ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন ড. হাছান মাহমুদ।
সত্তরের দশকের শেষ ভাগে স্কুলশিক্ষার্থী অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়ার্ড ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক পথচলা। আর তখন থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িয়ে নেন নিজেকে। বর্ণাঢ্য এই সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে নানা অপশক্তির দ্বারা বারবার অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হন এই আদর্শ রাজনীতিবিদ।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঙ্গী করে এই মেধাবী রাজনীতিবিদ সফল ও আদর্শ নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাঁর রাজনৈতিক বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। বারবার পাওয়া প্রাণনাশের হুমকি এতটুকু পিছু হটাতে পারেনি ড. হাছান মাহমুদকে আন্দোলন সংগ্রামের পথ থেকে।
হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলে হাছান মাহমুদের রাজনৈতিক পথচলা। ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের পর ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। এসময় তাঁর বিচক্ষণ নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। নির্বাচনে হাছান মাহমুদ ছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার কার্যকরী সংসদের সবচেয়ে নবীনতম সদস্য মনোনীত হন। এরপর বেলজিয়ামে থাকাকালে হাছান মাহমুদ ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ১৯৯৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব দ্য ইউনিভাসিটির সভাপতি, ১৯৯৩ সালে বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ পর্যন্ত বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. হাছান মাহমুদ। দেশে ফিরে তিনি ২০০১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির বিশেষ সহকারী এবং একইসঙ্গ ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন। দলীয় দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর থেমে থাকা নয়Ñ ২০০৯ থেকে ২০১৩ সময়কালে তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে টানা তৃৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়) দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ড. হাছান মাহমুদ ১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের হাতে গ্রেফতার হন। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন এই ত্যাগী ও আদর্শ রাজনীতিবিদ। আজও তাঁর শরীরে চল্লিশটি ¯িপ্লন্টারের দুঃসহ স্মৃতি বহন করে চলেছেন। ২০০৭ সালে সামরিক সমর্থিত সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে ড. হাছান মাহমুদ দলীয় সভাপতির মুখপাত্র হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে দলের নেতা-কর্মীদের দ্বারা প্রশংসিত হন।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে আন্দোলন ও সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস। তবে শত বাধায়ও কখনো নিজেকে পিছিয়ে রাখেননি, মনোবল হারাননি দূরদর্শী, নির্ভীক ও জনদরদী এই মেধাবী রাজনীতিবিদ।
ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে সফলতাই প্রমাণ করে ড. হাছান মাহমুদ রাজনীতির এক উজ্জ্বল ও মেধাবী নেতৃত্বের যোগ্য ও সফল দৃষ্টান্ত এবং একজন আদর্শ ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ।
জাহিদ সুলতান


Most Popular
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
একটা কথা আজকাল শোনা যায়, ‘আমাদের গল্পে আমাদের স...
নিজেকেই স্যাটিসফায়েড করতে চাই
বাংলা চলচ্চিত্রের শুদ্ধ মানুষ

২০১৮ বিশ্বকাপে মেসি আর বর্তমান আর্জেন্টিনার মেসি এক নয়,
বিধ্বস্ত মেসিকে খুব কমই দেখ...